তরফ নিউজ ডেস্ক : সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারেই করোনার আঁতুরঘর। এই মহামারীতে তছনছ বিভিন্ন রাজ্য। দেশটিতে প্রতিদিনই গড়ছে মৃত্যুর রেকর্ড। সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে আগেই সীমান্ত লক করেছিল বাংলাদেশ সরকার। তারপরও কাটেনি বিপদ। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। সীমান্তের চোরাই পথের সরু গলি দিয়ে কৌশলে চলছে এপার-ওপারে অবাধে যাতায়াত। এতেই বেধেছে গোল। প্রতিদিনই সীমান্তের গ্রামগুলোতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
এক গ্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আরেক গ্রামে। জেলার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। বাড়ছে সংক্রমণের হারও। খালি নেই হাসপাতালগুলো শয্যা। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার বেড়েছে ২৭ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে মারা গেছেন ১৩ জন। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৫ জন। করোনা শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী বাড়ার কারণে সাধারণ বেড ও আইসিইউ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৭৪ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৪৩ জন ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার। খুমেক পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় একদিনে ৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী খুলনা মেডিকেল কলেজ পিসিআর মেশিনে ১৮৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৫৬ জন খুলনা মহানগরী ও জেলার। এর মধ্যে ৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তদের মধ্যে খুলনা মহানগরী ও জেলায় ৪৯ জন, বাগেরহাটে তিন, যশোরে দুই, নড়াইলে এক ও মাগুরায় একজন রয়েছেন।
এদিকে গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামেই ১৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩৭ জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২৩ জন। তবে উপজেলার সীমান্তবর্তী তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামেই ১৩ জন, মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৯ জন ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৫ জন। মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার নাসির উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মেহেরপুর জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। ভারতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণে এ রোগে সীমান্তবর্তী গ্রামে প্রভাব বিস্তার করছে।
কারণ মেহেরপুরের সীমান্তের ওপারে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা। এ জেলার করিমপুর, তেহট্টি ফুলবাড়িয়া, বারুইপোতা, খানজিপুর, মোবারকপুর, লালবাজার, কৃষ্ণনগর, বেতায়, গোবিন্দপুর, হৃদয়পুর, সাহাপুর, নবীননগর গ্রাম। সীমান্ত সিলগালা থাকা সত্ত্বেও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শত শত ভারতীয় কৃষকরা প্রবেশ করছেন নোমান্সল্যান্ডে। ফলে দু’দেশের কৃষকরা পাশাপাশি মাঠের ক্ষেতে কাজ করছেন। ক্ষেতে কাজ করার সময় দু’দেশের কৃষকরা কখনও কখনও এক সাথে মেলামেশা করছেন। গাংনীর সীমান্তবর্তী মৈত্রাপুর গ্রামের কৃষক মোকাদ্দেস আলী জানান, আমরা সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করি। মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে ভারত। তফাৎ শুধু কাঁটাতার। একই জমির পাশাপাশি কাজ করতে হলে, দু’দেশের কৃষকদের মেলামেশা স্বাভাবিকভাবে হয়ে ওঠে।
এবার সংক্রমণের চাপ বাড়লে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি নজর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও বলছে, দেশে করোনাভাইরাসের বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যেমনটি দেখা গেছে পাশের দেশ ভারতে।